এই অপরূপ সুন্দর পৃথিবীতে মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টির সেরা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের কল্যাণের জন্য পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করেছেন। তবে এর মধ্যে কিছু কিছু বস্তু মানুষের খাদ্য হিসেবে বৈধ বা হালাল করেছেন। আর যা মানুষের খাদ্য হিসেবে কল্যাণকর নয় তা অবৈধ ও হারাম করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী, "তোমরা উত্তম ও পবিত্র জিনিস খাও, তোমাদেরকে যা আমি রিজিক হিসেবে দান করেছি।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭২)
খাদ্য গ্রহণে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও মানুষ অসৎ সঙ্গ ও কুপ্ররোচনায় নানা ধরনের ক্ষতিকর, হারাম বা নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এতে তার নিজের, পরিবারের ও সমাজের বিরাট ক্ষতি হয়।
মাদকাসক্তি ও ধূমপান মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো নেশাজাতীয় দ্রব্য। তাই এগুলো নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে রাসুল (স.) বলেছেন-
كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ
অর্থ: 'নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্য মদ, আর যাবতীয় মদই হারাম।' (মুসলিম)
ধূমপান
মানুষের ক্ষতিকর বদঅভ্যাসগুলোর মধ্যে ধূমপান অন্যতম। হুক্কা, বিড়ি, চুরুট, সিগারেট ধূমপানের মধ্যে পড়ে। এতে যেমন শারীরিক ক্ষতি হয় তেমনি অর্থেরও অপচয় হয়। অপব্যয়কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। অপব্যয়কারীকে আল্লাহ তায়ালা শয়তানের ভাই বলে আখ্যা দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন-
إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيْطِينِ
অর্থ: "নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীগণ শয়তানের ভাই।" (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৭)
আল্লাহ আরও বলেছেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অপব্যয়কারীকে ভালোবাসেন না।” 'ধুম' কোনো খাবারের মধ্যে পড়ে না। এটি ক্ষুধা বা তৃষ্ণাও মেটায় না। এর দ্বারা কোনো উপকার হয় না বরং এটা মারাত্মক শারীরিক ক্ষতিসাধন করে এবং এর দ্বারা প্রচুর অর্থের অপচয় হয়। এ অপব্যয় মেটাতে ধূমপায়ীরা নিজেদের পরিবারে অর্থের সংকট ঘটায়। আত্মীয়স্বজনের সাথে অসদাচরণ করে। এ অপব্যয়ের অর্থ সংকুলানের জন্য নানা ধরনের অবৈধ পথে পা বাড়ায়। ফলে সামাজিক অনাচার সৃষ্টি হয়। সমাজে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। ধূমপানের আর একটি ক্ষতির দিক হলো এটা খুব খারাপ গন্ধ ছড়ায়, যা অপরের জন্য ক্ষতিকর। এটা মানবাধিকারেরও পরিপন্থী।
আখলাক
মহানবি (স.) বলেছেন, 'মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে যেন কেউ মসজিদে না যায়।' (নাসায়ি)
মুখে দুর্গন্ধ থাকলে মসজিদে অন্য নামাযির কষ্ট হয়। এমনিভাবে যানবাহনে ও সভা-সমিতিতে অন্য মানুষ ধূমপায়ীদের মাধ্যমে কষ্ট পায় যা ইসলামে অবৈধ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, 'ধুমপানে বিষপান।' কারণ এতে বিষ আছে। নিকোটিন জাতীয় বিষ যা ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দেয়। ধূমপানের ফলে মানুষের শরীরে নানারকমের অসুবিধার সৃষ্টি হয়। যেমন: নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ব্রংকাইটিস, যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যানসার, গ্যাস্ট্রিক, ক্ষুধামন্দা, হৃদরোগ প্রভৃতি। ধূমপান পরিবেশকে নষ্ট করে। ধুমপানের সংস্পর্শে যারা আসে- মহিলা, শিশু, অধুমপায়ী সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে দুটি সিগারেটে যে পরিমাণ নিকোটিন থাকে তা যদি কোনো মানুষের শরীরে ইনজেকশন দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তবে সে অবশ্যই মারা যাবে।
ধূমপানের ফলে ইবাদতেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ধূমপায়ীর মুখের দুর্গন্ধে মুসল্লিদের ইবাদতেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
মাদকাসক্তি
সাধারণত যে সকল খাদ্যবস্তু বা পানীয় মস্তিষ্কে বিকৃতি ঘটায়, জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে দেয়, দেহ ও মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সেগুলো গ্রহণ করাকে মাদকাসক্তি বলে। মাদকাসক্তি একটি জঘন্য বদঅভ্যাস। এ সম্পর্কে হযরত উমর (রা.) বলেছেন-
'যা জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে দেয় তা মাদকদ্রব্য।' (বুখারি)
মহানবি (স.) আরও ঘোষণা করেন-
'যেই বস্তুর বেশি পরিমাণের মধ্যে মাদকাসক্তির কারণ রয়েছে, তার অল্প পরিমাণও হারাম।' (তিরমিযি)
নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে মদ, তাড়ি, আফিম, গাঁজা, ভাং, চরস, হাশিশ, মারিজুয়ানা, হেরোইন, মরফিন, কোকেন, প্যাথেড্রিন, সঞ্জীবনী সুরা, বিভিন্ন প্রকার অ্যালকোহল ইত্যাদি। ওষুধ হিসেবে এগুলোর কিছু কিছু ব্যবহার করা হয়। তবে নেশার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
মহান আল্লাহ বলেছেন, "নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী, ভাগ্য নির্ণায়ক শর, ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। তোমরা এসব থেকে দূরে থাকো। আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে।" (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৯০)
মাদকদ্রব্যের কুফল মানবজীবনে মারাত্মক বিপজ্জনক। যদিও সাময়িকভাবে মাদক আনন্দ দেয় বা শক্তি দেয়। কিন্তু এর ক্ষতিকর দিক খুবই সুদূরবিস্তৃত ও সর্বগ্রাসী। এ নেশার ফলে ব্যক্তি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মারামারি, হত্যাসহ নানাপ্রকার সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও মাদকাসক্ত ব্যক্তি অপুষ্টি, বুচিহীনতা, শারীরিক শীর্ণতা, লিভার ও কিডনি নষ্ট, ওজন কমে যাওয়া, শ্বাসনালির ক্ষতি প্রভৃতি সমস্যায়  ভোগে। কফ, কাশি, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগে দ্রুত আক্রান্ত হয়।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি নামায, রোযা এবং যাবতীয় ইবাদতের ব্যাপারে উদাসীন থাকে। সে সবসময় অসুস্থ থাকে। মাদকের নেশা তাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে রাখে, আর তাই সে পরকালে মহাশান্তি ভোগ করবে। মহানবি (স.) বলেছেন-
'মাদকাসক্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।' (দারিমি)
| কাজ: শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের বোর্ডে ধূমপানের অপকারিতাগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবে। | 
Read more